নীলফামারীর ডিমলায় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি’র) বিতরণকৃত চালের বস্তার গায়ে বিগত স্বৈর-আওয়ামী সরকারের স্লোগান পাওয়া গেছে। গত দুইদিন ধরে এমন দৃশ্যের দেখা মিলছে নীলফামারীর ডিমলা বিভিন্ন এলাকায়।
সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টিসিবির চালের বস্তায় লেখা রয়েছে- ‘ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’। অথচ গত বছরের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সরকারের পক্ষ থেকে এই নাম ও স্লোগান মুছে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হলেও, তা মানা হচ্ছে না স্থানীয় খাদ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে। এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্রমিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ডিমলা উপজেলার টিসিবির পণ্য সরবরাহকারী ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- অন্যান্য জেলাগুলোতে টিসিবির বস্তা পরিবর্তন করা হলেও নীলফামারীতে এর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
টিসিবির ডিলাররা বলেন, আমাদের যেসব বস্তা সরবরাহ করা হয়েছে আমরা তাই ব্যবহার করে আসছি। কোনো কোনো জায়গায় বস্তা পরিবর্তন এবং বস্তার গায়ের স্লোগান লেখাটি কালো কালি দিয়ে মেশানো হলেও আমাদের বেশিরভাগ বস্তাতেই এখনও এসব পরিবর্তন করা হয়নি এবং এ বিষয়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস থেকেও আমাদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসক আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। তবে সেই সরকারের প্রতিনিধি ও প্রেতাত্মারা এখনও কিছু কিছু জায়গায় বহাল তবিয়তে রয়েছে এবং খুব সুকৌশলেই তাদের কাজ করে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আকমল হোসেন বলেন, যে সরকারের শাসনে আমরা জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করেছি, সেই সরকারের নাম এখন আবার চালের বস্তায় দেখতে পাওয়া আমাদের জন্য অপমানজনক। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানেই তো জনগণ সেই ফ্যাসিবাদী শাসনকে প্রত্যাখ্যান করেছে, এখন আবার পুরনো সরকারের নাম কেন? এটা মনে হয়, সেই পুরনো স্বৈরাচারের পুনরুত্থান।
আরেক বাসিন্দা আব্দুর রহমান মাসুদ বলেন, গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে জনগণ ফ্যাসিবাদী শাসন প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন যদি সরকারি চালের বস্তায় সেই রক্তচোষা শাসকের নাম দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে, পুরোনো শাসনের প্রেতাত্মারা এখনো লুকিয়ে আছে। বিষয়টি অত্যান্ত কষ্টের।
শ্রমিক মো. মশিয়ার রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পর বস্তায় শেখ হাসিনার নাম মুছে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এখন আবার সেই নাম লেখা বস্তা আসছে। জনগণের আন্দোলনেই স্বৈরাচারী শাসন শেষ হয়েছে। এই নামগুলো মুছে ফেলার জন্য প্রশাসনের আরও তৎপর হওয়া উচিত, কারণ জনগণের মনে প্রতিকূলতা তৈরি হচ্ছে। পুরনো সরকারের শাসনের যন্ত্রণা ভুলে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রুহুল মোছাদ্দেক বলেন, শেখ হাসিনা নাম ও স্লোগান থাকার কথা নয়। যদি এমন হয়ে থাকে, তবে এটা অন্যায় হয়েছে। তবে বিষয়টি ওসি এলএসডির দেখার দায়িত্ব বলে দায় এড়িয়ে যান তিনি।
এবিষয়ে উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান মোহাম্মদ আজিজুল হাকিম বলেন, নাম মুছে ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু বস্তা থেকে যেতে পারে। আমরা বিষয়টি দ্রুত সমাধান করছি।
নীলফামারী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, বস্তা পরিবর্তন এই মুহূর্তে করা কঠিন। কারণ, এত বস্তা হুট করে সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তবে নাম ও স্লোগান মুছে ফেলার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এলএসডি হতে পুরনো স্লোগান সম্বলিত বস্তা যাতে সরবরাহ করা না হয় সে বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে জানান।
মন্তব্য করুন