পরীক্ষার উত্তরপত্র (খাতা) ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানকালে শিক্ষা বোর্ডের বেশ কিছু দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক কর্মকর্তারা।
১২ জানুয়ারী রবিবার সকালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা হয়। এ সময় দুদকের উপসহকারী পরিচালক খায়রুল বাশার, উপসহকারী পরিচালক আলম মিয়া, সহকারী পরিদর্শক শাহজাহান আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে কিছুদিন পূর্বে একটি অডিট টিম অডিট করতে আসেন। অডিট টিম শিক্ষা বোর্ডের বেশ কিছু কাজে অডিট আপত্তি দিয়ে যান। অডিট টিম শিক্ষা বোর্ডের কিছু কাজের জন্য ঘুষ লেনদেনের তথ্য উঠে আসে। এছাড়াও শিক্ষা বোর্ডে ক্রয় সংক্রান্ত বিষয় একটি অভিযোগ রয়েছে।
সেই সকল তথ্যের ভিত্তিতে ১২ জানুয়ারী রবিবার সকালে দুদকের ওই টীমটি দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে অভিযান শুরু করে। তারা বোর্ডের চেয়ারম্যান, হিসাব শাখা, স্টোর শাখা, স্টোর কক্ষসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন এবং কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেন। দুপুরের দিকে তারা অভিযান সম্পন্ন করে চলে যান।
এ সময় তারা উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে কথা বলেন। দুদকের সহকারী পরিচালক ও টীম লিডার ইসমাইল হোসেন বলেন, দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিছুদিন আগে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি অডিট টীম আসে। অডিট টীম কিছু আপত্তি দিয়ে গেছেন। একটি অভিযোগ ছিল যে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক ঘুষের লেনদেন হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে। সেই প্রেক্ষিতে আমরা এসে অভিযান পরিচালনা করে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যত্বা পেয়েছি। ক্রয় সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে যাবতীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে আমরা প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন প্রেরন করা হয়েছে। কমিশন পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আমাদেরকে জানাবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন প্রফেসর স. মু আব্দুস সামাদ বলেন, গত কয়েকদিন আগে একটি পত্রিকায় (দৈনিক প্রথম) একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, এখানে গত অর্থ বছরে ৫ বছরের খাতা ক্রয় করা হয়েছে যেটি বোর্ডে ঢুকেনি। এই রকমের তথ্য পরিবেশন ছাড়াও অডিট টীমকে কিছু টাকা দেয়া হয়েছে এমন তথ্য দেয়া হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। গত অর্থ বছরে উত্তরপত্র কেনা হয়েছে ই-জিপিতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ক্রয় করা হয়েছে। গত অর্থ বছরে ৫০ লাখ উত্তরপত্র ক্রয় করা হয়েছে। একটি বছরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তরপত্র লাগে ৪০ লাখ। গত অর্থ বছরে মজুদ ছিল ২০ লাখ উত্তরপত্র, আর আমরা টেন্ডার করেছিলাম ৫০ লাখ উত্তরপত্র। এখানে ৫ বছরের জন্য উত্তরপত্র কেনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, যার তথ্য-প্রমান আমরা দুদকের কর্মকর্তাদের কাছে সরবরাহ করেছি। আর্থিক লেনদেনের যে বিষয় বলা হয়েছে সেই বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। ওই পত্রিকায় যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে সেখানে আমার কিংবা অফিসের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। কারও ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে কিভাবে কখন কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে তা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের জানা নেই।
মন্তব্য করুন